1. live@www.sanatanisimanto.online : সনাতনী সীমান্ত : সনাতনী সীমান্ত
  2. info@www.sanatanisimanto.online : সনাতনী সীমান্ত :
মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন

সনাতন ধর্মে আমিষ নিরামিষ নিয়ে বিতর্ক!

সনাতনী সীমান্ত
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

সনাতন ধর্মে আমিষ নিরামিষ নিয়ে বিতর্ক ও বিভ্রান্ত হিন্দু সমাজঃ

 

(দয়া করে আমার পুরো লেখাটি পড়ে দেখুন)

প্রায়ই আমিষ, নিরামিষ নিয়ে তর্ক হয়! আমি ভেবে পাইনা আসলে আমিষ, নিরামিষ এর বিষয়ে শাস্ত্র কি বলে? অনেকে আমিষভোজী, অনেকে নিরামিষভোজী, জীব হত্যা মহাপাপ বলে! কিন্ত বস্তত আহারের সকলই তো জীব তা নয় কি? উদ্ভীদ হোক প্রাণী হোক, সকলেই জীব। আর বিষয় নিয়ে অনেক মতভেদ কেন? সমাধান কি?

প্রশ্নঃ- সনাতন ধর্মে আমিষ ও নিরামিষ আহার সম্পর্কে নিয়ে কি বলে?

জীব হত্যা মহাপাপ। আসলে বিষয়টা এমন নয়, অকারনে কোন প্রকার কিংবা হত্যা না করলেও চলে তবুও হত্যা করার নামই মহাপাপ। বাচতে গেলে অবশ্যই আহার করতে হবে, আর সে আহারের জন্য জীব হত্যা করলে সেটা অবশ্যই পাপ নয়। কারন আপদধর্ম তো এটাই বলে, যে যখন নিজের জীবন সংকটাপন্ন তখন জীবিকার তাগিদে যদি কোন প্রাণী হত্যা হয় তবে তা করা উচিৎ, নইলে নিজের জীবনই সংকটময় হবে। আমরা জীব। আমরা আমাদের জীবিকানির্বাহ করতে গেলে দেখা যাবে, জীব হত্যা করতে হবে। আর এটাই জগতের নিয়ম। আমরা প্রত্যেকেই খাদ্য শৃংখলে আবদ্ধ। জীবিকানির্বাহ করতে গেলে আরেকটি জীবনের নাশ করতেই হয়। বাঘকে বাচতে হলে অবশ্যই শিকার করতে হবে। আর জীবন বাচানোর ক্ষেত্রে আপদধর্ম ই বড়ধর্ম। আর এটাই মুখ্য বিষয়। কিন্ত আমরা মানবিক জীব। আমরা বাঘের মতো হিংস্র নই। আমরা রাস্তার পাশে একটি বিড়াল ক্ষুধার্ত হয়ে কাতরালে অবশ্যই আমরা তাকে বিস্কুট দেই। আমরা তাকে নিয়ে ফ্রাই করে খাইনা, যার মধ্যে মানবিক গুণাবলি আছে! সে অন্তত সাহায্যের বদলে তাকে ফ্রাই করে খাবেনা। এই যে বিবেচনা গুলো আমাদের মধ্যে কাজ করে, তার জন্যই আমরা মানবিক জীব। অপরের কষ্টে আমাদের মধ্যে সহানুভূতি ই প্রমান করে আমরা মানবিক জীব, যা বাঘ ও হিংস্র প্রানীদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়না। যেহুতু আমরা মানবিক জীব, সেহুতু আমাদের চিন্তা ভাবনাও ব্যতিক্রম। আমরা অবশ্যই আহারের ক্ষেত্রে অনেক ভাবে চিন্তাভাবনা করি। মুলত, যে যা আহার করুক তাতে অন্যের হস্তক্ষেপ করা বোকামি। তবে সময় ও সমাজের কথা অবশ্যই মাথায় চিন্তা করতে হবে। আপনি চাইলে যেরুপ নিজের টাকা দিয়ে মাদক নিতে পারেন, তথাপি দেশের আইন বিরোধীর কারনে শাস্তিযোগ্য হয় সেরুপ আমাদের শাস্ত্রে যা আছে, তা আমাদের অবশ্যই মানা উচিৎ কার্য।

 

মূলত শাস্ত্রে আমিষ, নিরামিষ বলতে তেমন কোন কথাই উল্লেখিত পাওয়া যায়না। যা পাওয়া যায়, তা হলোঃ-

সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক আহারের কথা। গীতায় এই ব্যাপারে স্পষ্টই বলা আছে এই তিন প্রকার আহারের কথা।

“যে আহার আয়ু, সত্ত্ব, বল, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতি বর্ধনকারী এবং রসযুক্ত, স্নিগ্ধ, স্থায়ী ও মনোরম, সেগুলো সাত্ত্বিক আহার হিসেবে সর্বদা বিবেচ্য হয়ে থাকে” (গীতা, ১৭/৮)

ব্যাখ্যা করে দিচ্ছি,

যে আহারগুলো সেবনে আমরা তৃপ্তি অনুভব করি এবং যে তৃপ্তি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয়। যা সর্বদা উত্তম হিসেবে বিবেচ্য এবং ধর্ম পথ ও ধর্ম কার্য এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে সর্বদা সাহায্য করে। তাই সাত্ত্বিক আহার। যেমন, ভাত, ডাল, সবজি, দুগ্ধ ইত্যাদি। এইগুলো স্বাভাবিক আহারে আপনার দেহ ও মন স্বাভাবিক থাকবে।

“যে আহার অতি তিক্ত, অতি অম্ল, অতি লবনাক্ত, অতি উষ্ণ, অতি তীক্ষ্ণ, অতি শুষ্ক, অতি প্রদাহকর এবং দুঃখ, শোক ও রোগপ্রদ সেগুলো রাজসিক আহার হিসেবে বিবেচ্য” (গীতা, ১৭/৯)

ব্যাখ্যা করে দিচ্ছি,

যে আহারগুলো সেবনে লোভ, কাম, ক্রোধ, ব্যাথা, যন্ত্রনা অনুভব হয়। যা আমাদের শরীরের জন্য সর্বদা হীতকর হয়ে না। যা সর্বদা উত্তম হিসেবে বিবেচ্য হয়না এবং ধর্ম পথ ও ধর্ম কার্য এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে সর্বদা সাহায্য করেনা। তাই রাজসিক আহার হিসেবে কথিত।

যেমন, মাংস, অতি টক, অতি ঝাল, অতি শক্ত, অল্প রশালো ইত্যাদি। এইগুলো গ্রহনে অবশ্যই আমাদের দেহ ও মনে বিশাল প্রভাব পড়ে। যা আমাদের ভিতরে তাপ ও বাহিরে উত্তাপ ছড়ায়। এই আহার সর্বদা সাহায্য করেনা, কিন্ত এর মানে করেই না এমন নয়। কিন্ত ইহা সেবনে মন অত্যাধিক চঞ্চল হয়, যা ধর্ম ধারন করতে বাধাগ্রস্ত হয়।

“যে আহার অনেক পূর্বে রাঁধিত, যা নীরস, দুর্গন্ধযুক্ত, বাসী, পচা, যা র ঘ্রান গ্রহনে নাসিকা সরে আসে এবং অপরের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য ও অমেধ্য দ্রব্য, সেই সমস্ত তামসিক হিসেবে বিবেচ্য” (গীতা, ১৭/১০)

ব্যাখ্যা করে দিচ্ছি,

যে আহারগুলো সেবনে উন্মাদনা, বমিভাব, হজমে বাধাগ্রস্ত, যে আহার দেখতেও অপরিষ্কার ও অরুচিকর, যা দেহ ও মনের জন্য সর্বদাই ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচ্য এবং ধর্ম পথ ও ধর্ম কার্য এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে সর্বদাই ব্যাঘাত ঘটায়। তাহাই তামসিক আহার হিসেবে কথিত।

যেমন, মাদকদ্রব্য, নেশাদ্রব্য, নিষিদ্ধ খাবার সমুহ। ইহা সেবন আমাদের শরীরের জন্য অবশ্যই খুব ক্ষতিকর এবং তা অপরের জন্যও ক্ষতিকর।

আসলে শাস্ত্রে নিরামিষ আমিষ নিয়ে নয়। সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক আহারের কথাই বলা আছে। আর নিরামিষ ভোজী রা সাধারণত সাত্ত্বিক আহারকেই কেন্দ্রস্থল হিসেবে নিজেকে নিরামিষ ভোজী দাবী করেন।

কিন্ত বস্তত দুধ ও আমিষ হিসেবে কথিত আছে! যদিও বা দুধের মধ্যে প্রোটিনের মাত্রা অন্যসব আমিষ আহারের চাইতে অনেক কম, প্রায় ৩% এর মত। যার দরুন তাকে সাধারণত নিরামিষভোজী রা নিরামিষ ভাবে। কিন্ত শাস্ত্রে এই আমিষ, নিরামিষ নয়! সাত্ত্বিক আহার হিসেবেই ঘোষিত করেছে।

তবে একজন সাত্ত্বিক আহার ভোজী মানেই যে, অন্যসব ভোজীর চাইতে উত্তম হবে। এর কোন নিশ্চয়তা নেই। আমি নিজেও স্বয়ং সাত্ত্বিক আহারী। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,

“যে কেবল তৃনভোজন করেই আপনি মহাপুরুষ হইতে পারবেন নাহ। আপনার মধ্যে দেবতা প্রকাশ পাইবেনা। তৃন তো গাভী, ষাড়েও সেবন করে! তাই বলে কি তারা মহামানব হয়েছে?

ধর্ম মানুষের হৃদয়ে ধারন করতে হয়, আর তাহাই বিকাশিত হয়। যে তাহার যোগ্য হইয়াছে, তাহার মধ্যেই দেবত্ব প্রকাশ হয়েছে ”

আসলে বস্তত সাত্ত্বিক আহারই আপনাকে সত্য দর্শন করাবেনা। কিন্ত তাই বলে, রাজসিক ও তামসিককে আপন করারও কোন মানে হয়না। পরীক্ষায় কি আপনি A+ পাবেন কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই। কিন্ত এর মানে এই নয়, নিশ্চয়তার অভাবে আপনি পড়াশোনাই বন্ধ করে দিবেন! আপনি আপনার সেরা প্রস্ততিটা নিন, বাকিটা ইশ্বরই ভালো জানেন। আর গীতায় এই বিষয়ে স্পষ্টই আছে যে,

“এই তিন অবস্থার মধ্যে সবসময়ই সাত্ত্বিক উত্তম হিসেবে বিবেচিত লাভ করে। আর রাজসিক ও তামসিকের চাইতে ফলাফলও সাত্ত্বিকই ভালো লাভ করে” (গীতা, ১৪/৬-১৮)

সাত্ত্বিক আহার অবশ্যই রাজসিক ও তামসিকের চাইতে উত্তম। কিন্ত তাই বলে আপনি কারো উপর জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ, করতে পারেন নাহ। আপনি সাত্ত্বিক আহারী, আপনি আপনার মতো চলুন। যদি কেউ আপনার উপর অনুপ্রাণিত হয়, তবে সে অবশ্যই আপনার এই বিষয়গুলো আনন্দের সহিত মেনে নিবে। আপনি খান না, এর মানে এই নয়! সেই খাবারকে আপনি ঘৃনা করবেন।

আপনি খান নাহ, আপনার জন্য এটা সুখকর। অন্যরা খায়, আপনি সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন নাহ। আবার কিছু মানুষ যুক্তি দেখায়, আপনি যদি কেবল সাত্ত্বিক আহার করেন! তবে আপনার শরীরে প্রোট্রিনের মাত্রা কমে, আপনি দুর্বল হয়ে পড়বেন! তাই আপনার অবশ্যই আমিষ খাওয়া উচিত?

যারা বিজ্ঞান সম্পরকে ধারনা রাখেনা, তারাই এমন বলে। আমাদের শরীরে দৈনন্দিন বাচার জন্য ৪৬-৫৭% প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে। আপনি যদি কেবল ডাল, ভাত খান তবে আপনি সেই প্রোটিন সহজেই পেয়ে যাবেন। এমনকি প্রয়োজনের তুলনায় অধিকই পাবেন। আপনি আপনার রুচির জন্য, অযোক্তিক কিছু বললে সেটা অবশ্যই গ্রহনীয় নয়।

আপনার খাওয়া,দাওয়া আপনার ব্যক্তিগত বিষয় বটে। কিন্ত শাস্ত্রকে মান্য করাও কিন্ত উত্তম কার্য। যদিওবা ধর্ম কোন ব্যাক্তির উপর নির্ভর করেনা, তথাপি একজন সনাতনধর্ম এর অনুসারী হলে অবশ্যই লোক শিক্ষার জন্য হলেও আপনার তা ধারন করা উচিত।

একবারে কোন কিছুই সম্ভব নাহ, ইচ্ছা ও মনোবল রাখুন। ধীরে ধীরে সবকিছুই সম্ভব হয়ে যাবে।

আপনার বিষয়টি সম্ভব না হলে অর্থাৎ আপনার কাছে আপাত দৃষ্টিতে সমস্ত কিছু প্রতিকুল হলে সেটা আলাদা বিষয়। সংকল্প রাখুন একদিন আপনিও সাত্ত্বিক হয়ে উঠতে পারবেন। আর আমি সাত্ত্বিকি আপনাকে দেখে নিন্দা করার কিছু নেই, আপনি রাজসিক তা দেখে আমাকেও উপহাস করার কিছু নেই। ইশ্বরের জগতে আপনি, আমি উভয়েই দাদাভাই য়ের মত। তাই কাউকে হিংসা, নিন্দা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

উদ্ভীদ এরও প্রান আছে, প্রানীজেরও প্রান আছে। তাই দুটো হত্যাই একসম। তাই উদ্ভীদ, প্রানীজ একই বিষয়। এই রকম যারা ভাবেন তাদের মতে অবশ্যই ত্রুটি আছে!!

এর কারন হলো, আমরা মানবিক জীব। আমরা অনেক কিছু ই পুষে রাখি। আমরা সেইগুলো যত্ন নিই এবং ভালোবাসা দিতে আগলে রাখি। কিন্ত পশু হিংস্র প্রানীরা কিন্ত তা পারেনা। তাদের কাছে পেটের ক্ষুধাই প্রথম। আমরা এক্ষেত্রে সচেতন ও বিপরীত। আমরা জানি যে, উদ্ভিদ হোক আর প্রানী হোক দুটোই হত্যা!

কিন্ত তথাপি আমরা চাইলেই প্রানীজ হত্যা না করেও জীবন নির্ধারণ করতে পারি সহজেই। আপনি একটি গাছের আম ছিড়লেন, গাছটি কিন্ত মরবেনা! আর তার আম দেওয়ার যোগ্যতাও হারাবেনা। আপনি একটি সবজি গাছের ধরুন লাউ গাছের লাউ কাটলেন, তাও কিন্ত গাছটি মরবেনা বরং ভবিষ্যতে আরো লাউ দিতে পারবে।

কিন্ত একটি প্রানীজ হত্যা তথা ধরুন মুরগীর পা কাটলে তার পা তো গজাবেনাই বরংচ তার পায়ের রক্তক্ষরনের কারনে মুরগীটি মারাও যেতে পারে। আর এমন ভাবে সকল প্রানীজ এরই একই অবস্থা ঘটে। যা উদ্ভিদজাত এর মধ্যে ঘটেনা। বাচতে হলে আরেকটা প্রানীকে হত্যা করতেই হবে। কিন্ত আমরা চাইলেই একটা প্রানীকে হত্যা নাও করে থাকতে পারি। উদ্ভিদের থেকেই জীবিকা নির্বাহ এর রশদ দিয়ে দিব্যি বাচতে পারি।

আর শুধু যে সনাতনীরাই সাত্ত্বিক হয় এমন নয়। স্যার আইজ্যাক নিউটন, আইন্সটাইন, সক্রেটিস থেকে শুরু করে অনেক বিজ্ঞানী, সেলিব্রেটি ও অনান্য অনেক মানুষই উদ্ভিদভোজী ছিলেন। ভারতের পরমানু বিজ্ঞানী এ পি যে আব্দুল কালাম, বিশ্বসেরা বক্সার মোঃ আলীও কিন্ত উদ্ভীদভোজী ছিলেন। এমন অনেক মানুষই ছিলেন এবং এখনও অনেক মানুষ আছেন যারা উদ্ভিদভোজী । ইন্ডিয়ায় প্রায় ৪ ভাগের একভাগ মানুষ উদ্ভিদভোজী। ইউরোপের ও প্রায় অনেক সংখ্যক মানুষও উদ্ভীদভোজী। যদিওবা তাদের আবহাওয়া ঠান্ডা বলে হওয়াটা কঠিন।

যাই হোক,

কে হলো আর কে হলোনা, তা নিয়ে মাথা না ব্যাথা করাই উত্তম। যার যা ইচ্ছা সে খাক। যদি কেউ উদ্ভিদভোজী হয়, তাকে স্বাগতম। যে হবেনা তাকে ঘৃনা কিংবা উপহাস করার কোন কারন নেই। সবাই ভালো থাকুক,জগতের প্রতিটা প্রানী সুখে থাকুক এটাই কামনা করি। আর সর্বশেষ একটা শাস্ত্রের কথা বলতে চাই,

উপনিষদ এর শুরুতেই বলা আছে, ত্যাক্তেন তেন ভুঞ্জিথাঃ-

অর্থাত ত্যাগের সহিত ভোগ করো। (ঈশ উপনিষদ, ১/১)

অর্থাৎ ভোগ করার আগে ত্যাগের মনোভাব রাখা দরকার। ভোগ করার অধিকার তার জন্যই আছে, যে সেই ভোগ কে তুচ্ছ জ্ঞানে ত্যাগ করতে জানে। আর এতেই পরমশান্তি লাভ হয়।

প্রাণ ধারণের জন্য সনাতন হিন্দু শাস্ত্রে প্রাণীর মাংস ভক্ষণের বিধান আছে। গৃহস্থের জন্য জীবন ধারণের জন্য মাংস ভক্ষণ বেদ, গীতা, স্মৃতিশাস্ত্র ইত্যাদি কোন শাস্ত্রেই নিষিদ্ধ নয়, তবে যারা সন্ন্যাস ধর্ম পালন করছেন তাদের কথা আলাদা।

নিন্মে প্রমাণ দেখুনঃ-

“যজ্ঞের জন্য ও অবশ্যপালনীয় জীবনধারণের জন্য প্রশস্ত পশুপাখি বধ্য। প্রাচীনকালে অগস্ত মুনি এরুপ আচরণ করেছিলেন।” (মনুসংহিতা, ৫/২২)

“সকল স্থাবর (উদ্ভিদ) ও জঙ্গম (প্রাণী) ব্রহ্মা প্রাণীর প্রাণধারণের জন্য সৃষ্টি করেছিলেন। সুতরাং প্রাণী সকল প্রয়োজনে ভোজ্য।” (মনুসংহিতা, ৫/২৮)

“প্রতিদিন ভক্ষ্য প্রাণী সকল ভক্ষণ করে ভোক্তা দোষভাগী হয় না। বিধাতাই ভক্ষ্য প্রাণী ও ভক্ষকগণকে সৃষ্টি করেছেন।” (মনুসংহিতা, ৫/৩০)

“ব্রহ্মা নিজেই যজ্ঞের জন্য পশুগণকে সৃষ্টি করেছেন। যজ্ঞ সকলের উন্নতির কারণ, সুতরাং যজ্ঞে পশুবধ বধ নয়।” (মনুসংহিতা, ৫/৩৯)

“ক্রীত বা নিজে পশু পালন করে তার মাংস বা অপর কর্তৃক প্রদত্ত মাংস দেবগণ ও পিতৃগণকে অর্চনা করে ভক্ষণ করলে দোষভাগী হয় না।” (মনুসংহিতা, ৫/৩২)

বনবাসে ভরদ্বাজ মূনি রাম সীতা লক্ষণের ভোজনের জন্যে পশুর মাংস ও ফলমূলের ব্যবস্থা করেছিলেন। (বাল্মীকি রামায়ণ, ২/৫৪)।

নিষাদরাজের অতিথি হয়ে মদ্য, মৎস্য এবং নানান রকমের শূষ্ক ও আর্দ্র মাংস ভোজন করেছিলেন। (বাল্মীকি রামায়ণ, ২/৮৪)।

মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরে কৃষ্ণ, যুধিষ্ঠিরকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে রাজা “রন্তিদেবের” মাহাত্ম্য সম্বন্ধে উদাহারণ দিতে গিয়ে বললেন যে এই রাজা দ্বারা যজ্ঞে নিহত অসংখ্য পশুর চামড়া থেকে নির্গত রসে চর্মম্বতী নামক নদী (আধুনিক চম্বল) সৃষ্টি হয়েছিল এবং তিনি অতিথি সৎকার ও সেবা করতেন কুড়ি হাজার একশত পশু কেটে তাদের মাংস পরিবেশন করে। (বেদব্যাসী মহাভারত, ১২/২৯)। এই প্রসঙ্গে কৃষ্ণ রাজা রন্তিদেবের পুণ্যতাকে যুধিষ্ঠিরের উর্ধ্বে স্থান দেন।

এছাড়া অর্জুনসহ পঞ্চপাণ্ডবরা মাংস খেতেন। কৃষ্ণ খান্ডব বন দাহনের সময় ঝলসে যাওয়া হরিনের মাংস খেয়েছিলেন। গীতায় কোথাও মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধের কথা বলা হয়নি। গীতার যে শ্লোকের কথা বলে তথাকথিত নিরামিষ বাদীরা মাংস ভক্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলেন।

আসলে কি শ্রীরামচন্দ্র নিরামিষাশী ছিলেন?

পুরো বাল্মীকিরচিত রামায়ণ না হয় বাদই দিলাম, শুধুমাত্র রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ডেই অসংখ্য স্থানে শ্রীরামচন্দ্রের মাংসাহারের কথা আছে। আমি শুধুমাত্র কয়েকটি স্থানের বাংলা অনুবাদ তুলে দিচ্ছি-

” অনন্তর রাম ও লক্ষ্মণ ক্রোশমাত্র পথ অতিক্রম করে বহু মৃগ বধ করলেন এবং যমুনা প্রদেশস্থ সেই বন মধ্যে ভোজনাদি ক্রিয়া সমাধা করলেন।”

(অযোধ্যাকাণ্ড : ৫৫. ৩২)

“রাম দেখলেন, পর্ণশালাটি দৃঢ়ভাবে নির্মিত, পত্র-পটলে আচ্ছাদিত ও দেখতে অতি সুন্দর হয়েছে, দেখে সেবা- পরায়ণ লক্ষ্মণকে বললেন-ভাই মৃগমাংস আহরণ করে বাস্তুযাগ করতে হবে। যারা দীর্ঘজীবন কামনা করেন, বাস্তুশান্তি বা বাস্তুযাগ তাদের পক্ষে অবশ্য কর্তব্য। অতএব হে শুভদর্শন লক্ষ্মণ, অবিলম্বে একটি মৃগ শিকার করে নিয়ে আসো; ধর্মাচার ভুলিও না- শাস্ত্রীয় বিধান অবশ্যই পালন করতে হবে।

অরিন্দম লক্ষ্মণ দাদা রামের কথানুসারে সমস্ত কার্য নির্বাহ করলেন। রাম তাকে পুনরায় বললেন, – লক্ষ্মণ, এই হরিণের মাংস রান্না করো ; ঐ মাংস দ্বারা পর্ণশালায় অর্চনা করতে হবে। অতএব তাড়াতাড়ি করো, অদ্যকার এই দিন ধ্রুবনক্ষত্র সমন্বিত পবিত্র, তাই এর প্রত্যেকটি মুহূর্তকালই শুভ। এই শুভমুহুর্ততেই আমি রন্ধনকৃত মৃগমাংস দ্বারা পর্ণশালার উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করবো।”

(অযোধ্যাকাণ্ড : ৫৬. ২১-২৫)

 

গীতার #শ্লোকে কি বলা হয়েছে তা দেখে নেয়া যাকঃ-

“যে ভক্ত যত্নপূর্বক আমাকে পত্র, পুস্প, ফল ও জল অর্পন করেন, আমি তার সেই ভক্তি আপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহন করি।” (গীতা ৯/২৬)

এখানে ভগবান বলতে চেয়েছেন যে পত্র, পুস্প, ফল ও জল ইত্যাদি যত ক্ষুদ্র উপহারই তাকে নিবেদন করা হউক না কেন তিনি তা গ্রহণ করেন। যদি এই শ্লোকের আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা হয় তা হলে পত্র, পুস্প, ফল ও জল ছাড়া আর কোন কিছুই ভগবানকে নিবেদন করা যাবে না। যেমন দুধ, মধু, অন্ন, আটা, শাকসবজি ইত্যাদিও তাহলে নিবেদন করা যাবে না। আমরা জানি গাছেরও প্রাণ আছে। শাকসবজি নিবেদন করলে প্রাণ হত্যা করা হয়। তাহলে কেন ইস্কনভক্ত বা নিরামিষবাদীরা শাকসবজি খায়। তাছাড়া ভগবান শুধু যদি পত্র, পুস্প, ফল ও জল অর্পন করতে বলেন তবে শাকসবজির প্রাণ হরণ করে তা নিবেদন করা যাবে না, শুধু তার পত্র নিবেদন করা যাবে কারণ পত্র তুললে গাছ মেরে ফেলতে হয় না। আসলে ভগবান যদি মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ করতো তা হলে তিনি গীতায় তা সরাসরি বলেই দিতেন।

 

গীতার ৯ম অধ্যায়ের ঠিক পরের শ্লোকটিতে দেখুন কি বলা আছেঃ-

“হে কৌন্তেয়, তুমি যা অনুষ্ঠান কর, যা আহার কর, যা হোম কর, যা দান কর এবং যে তপস্যা কর, সেই সমস্তই আমাকেই অর্পন কর। (গীতা, ৯/২৭)।

“এই ভাবে আমাকে সমস্ত কর্ম অর্পন দ্বারা শুভ এবং অশুভ ফল বিশিষ্ট কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হবে।” (গীতা, ৯/২৮)।

মানে একেবারে সোজা। আমরা যা কিছুই আহার করি না কেন তা ভগবানের কাছে নিবেদন করলেই তার শুভ এবং অশুভ ফল বিশিষ্ট কর্মের বন্ধন থেকে আমরা মুক্ত হবো।

আসলে নিরামিষ আহার বলে কিছু নেই। ভাত, আটা, ডাল, দুধ ইত্যাদি সব কিছুতেই আমিষ আছে। দুধ কিন্তু প্রানীজ আমিষ। প্রকৃত অর্থে নিরামিষ নয়, সাত্ত্বিক আহার বলে গীতায় যে শ্রেষ্ঠ আহারের কথা বলা হয়েছে সে সম্পর্কে গীতায় ভগবান কি সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা দেখে নেয়া যাকঃ-

যে সমস্ত আহার আয়ু, উদ্য্ম বল, আরগ্য, সুখ ও প্রীতি বৃদ্ধি করে এবং সরল, স্নিগ্ধ, পুষ্টিকর ও মনোরম সেগুলি সাত্ত্বিক ব্যক্তিদের প্রিয় হয়। যে সমস্ত আহার, দুঃখ্, শোক ও রোগ সৃষ্টি করে এবং অতি তিক্ত অতি অম্ল অতি লবন যুক্ত অতি উষ্ণ অতি তিক্ষ্ণ অতি শুস্ক অতি প্রদাহকর সে গুলি রাজসিকদের প্রিয় হয়। এক প্রহরের অধিক পুর্বে রান্না হওয়ার ফলে যে সমস্ত খাদ্য বাসী হয়ে গেছে যা নিরস অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত পুর্বদিনে রান্না হয়ে পর্যুষিত এবং অপরের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য ও অমেধাকর দ্রব্যসকল তামসিক লোকের প্রিয়। (গীতা, ১৭/৮-১০)।

এখানে ভগবান কিন্তু বলেননি যে মাংস হলো তামসিক আহার। যাহা সরস, টাটকা, স্নিগ্ধকারক ও চিত্তের প্রফুল্লতাজনক তাকে সাত্ত্বিক আহার বলা হয়েছে। পাঠার মাংস, হরিনের মাংস কিন্তু অত্যন্ত বল বৃদ্ধিকারক ও চিত্তের প্রফুল্লতাজনক। আয়ুর্বেদে এসব মাংস আহারের উপদেশ দেয়া আছে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে বেদে পশু বলির ও তা ভক্ষণের কথা আছে। মনু সংহিতায় কোন কোন প্রাণীর ও পশু-পক্ষীর মাংস খাওয়া যাবে ও কোনগুলো খাওয়া যাবে না তার তালিকাও দেয়া আছে পঞ্চম অধ্যায়ে। তবে জীবনধারণ ছাড়া শখ ও হিংসাবশত প্রাণী হত্যা মনু সংহিতায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই মাংস ভক্ষণ শাস্ত্র সন্মত।

তথাকথিত নিরামিষবাদীরা আমিষ, নিরামিষ ও সাত্ত্বিক আহারের মধ্যে পার্থক্যও বুঝে না। তাদের মন গড়া তত্ত্ব দিয়ে মাছ-মাংস আহারকারী গৃহস্থ ধর্ম পালনকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা করে পাপী-তাপী ও অপবিত্র হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা এভাবে সনাতন ধর্মকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। কেউ ধর্ম-কর্ম করতে গেলেই তারা তথাকথিত নিরামিষ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়, বিশেষ করে ইস্কনের লোকজন। ফলে প্রথম দিকে তাদের প্রচার বাড়লেও এখন কিন্তু ইউরোপ আমেরিকায় তাদের প্রচার থমকে গেছে। সাধু-সন্ন্যাসীরা যারা মঠ মন্দিরে বাস করে তারা মাছ-মাংস না খাক, আমরা তা স্বাগত জানাই, কিন্তু গৃহস্থ মানুষের জন্য মাছ-মাংস খাওয়া ১০০% শাস্ত্র সম্মত।।

মাংস খাওয়া নিয়ে বেদ কি বলে?

উত্তরঃ- হ্যাঁ আছে ।

নিরামিষ খাওয়া বা আমিষ খাওয়া দুটোই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যপার। তবে বর্তমান হিন্দু সমাজকে নিরামিষাশী বানানোর দৌরাত্ম দেখে কৌতূহল হলো, আসলেই কি আমিষি খাবার নিয়ে বিশেষ করে মাছ মাংস নিয়ে কি বৈদিক যুগ গুলোতে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিলো? বৈদিক যুগে কি মাংস ভক্ষন হতো?

এই নিরামিষ খাওয়ার ব্যাপারটা কে এতটায় ভন্ডামীর পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে ‘প্রভুপাদ’ পর্যন্ত তার গ্রন্থে যারা আমিষ খায় তাদের ‘যবন’ (আসলে যবন কাদের বলা হয় সেটা আমরা কমবেশি জানি) বলে সম্বোধন করেছে! হিন্দুরাই আজকাল নিরামিষ আমিষের ইস্যু তুলে একজনের ঘরে আরেকজন জল খাবার খায়না! শুধু এতটুকুই না, যে মায়ের গর্ভের রক্ত খেয়ে বড় হলো সেই মায়ের হাতের খাবার পর্যন্ত নাকি কেউ কেউ খায়না! (বাইরে কখনো দোকানের খাবার খায় কিনা সেটা জানতে চেয়ে লজ্জা দিবেন না) এদের কে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে এ ব্যাপারে তাহলে তারা তাদের শাস্ত্র জ্ঞান জাহির করে বলবে শাস্ত্রে এটা বলে, ওটা বলেছে।বিশেষ করে খেয়াল করবেন ‘বৈদিক শাস্ত্রে’র ফুলঝুড়ি। আর গীতার কথাতো উল্লেখ্য করবেই,অবশ্য গীতার কোথায় আমিষ খেতে নিষেধ করেছে সেটা আজ অবধি কেউ বলতে পারেনি।

ওঁ শান্তি! ওঁ শান্তি! ওঁ শান্তি!

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট